এম ইদ্রিস আলী, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্যসেবায় চলছে নজিরবিহীন সংকট। আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভার এখন পড়েছে মাত্র দুজন চিকিৎসকের ওপর। তার মধ্যে একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করছেন। ফলে প্রায় একাই সামলাচ্ছেন সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা।সাধারণ মানুষেরা বলছেন-রাজনগরের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আজ এক নির্মম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। চিকিৎসক সংকট, ভাঙা অবকাঠামো আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বিপর্যস্ত আড়াই লাখ মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগ না নিলে এখানকার মানুষের জীবন আরও গভীর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে যাবে।
৫০ শয্যার হাসপাতালে চলছে মাত্র ১৯ শয্যায়
রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ২০১৮ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাস্তবে এখন চলছে মাত্র ১৯ শয্যায়। পুরনো ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় সেটি ভেঙে ফেলতে হয়, নতুন ভবন উদ্বোধনের আগেই সেখানেই স্থানান্তর করা হয় রোগীদের। গাইনি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও যথাযথ জনবল না থাকায় তা চালু হয়নি এখনো। এক্সরে মেশিন ২০ বছর ধরে অচল।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ ফাঁকা ৭ মাস
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সৈয়দ শাহরিয়ার মাহমুদের বদলির পর থেকে পদটি খালি। তার বদলির বিরুদ্ধে মামলায় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও যোগদান করতে পারেননি। এখন মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম কিবরিয়াই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার পক্ষে সব দায়িত্ব একসাথে সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
২১ ডাক্তারের স্থলে মাত্র ২ জন!
সার্বিক চিত্র আরও ভয়াবহ—২১ জন এমবিবিএস চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত মাত্র ২ জন। ১২টি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন।
বিশেষ করে, ডা. সুভাশিষ গুপ্ত ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, অথচ তার পদটি আজও শূন্য ঘোষণা করা হয়নি। স্যাকমো মুস্তাকুর রহমান পলাশও তিন বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন।
প্রতিদিন রোগীর চাপ গড়ে ৫০০+
স্বল্প জনবলেও প্রতিদিন আউটডোরে আসছে গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী। ফলে ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. অসীম কুমার অনবরত চাপে থাকেন। জরুরি বিভাগে একমাত্র স্যাকমো মো. সোহেল রানা ও তার সহকর্মীরাই রোগীদের সামলাচ্ছেন।
জনবল সংকটে বন্ধ গাইনি, ল্যাব ও এক্সরে সেবা
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩৩টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৪৩টি শূন্য। গাইনি কনসালটেন্ট থাকলেও ল্যাব টেকনিশিয়ান না থাকায় অপারেশন থিয়েটার চালু করা যাচ্ছে না। এনেসথেসিয়া চিকিৎসক রয়েছেন সদর হাসপাতালে প্রেষণে।
প্রশাসনের নীরবতা ও অনাগ্রহ
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মামুনুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ডা. গোলাম কিবরিয়া বলেন, “এই জনবল নিয়ে সেবা দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। গাইনি বিভাগে ডাক্তার থাকলেও চালাতে পারছি না টেকনিশিয়ান সংকটে।”
আশ্বাস শুধু কথার মধ্যেই!
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, “এটা শুধু রাজনগরের সমস্যা নয়, প্রায় সবখানে একই অবস্থা। আমরা চেষ্টা করছি, আশা করছি আগামী ৩ মাসের মধ্যে কিছু ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।”